Tuesday, February 24, 2015

অপরাধ সশস্ত্র বাহিনীকে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা ২১ ঘণ্টা পর মান্নাকে থানায় হস্তান্তর

http://facebookbahar.blogspot.com/নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা তাঁকে গুলশান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তাঁর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিদ্রোহে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় মান্না ছাড়াও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে আটকের পর থেকে ২১ ঘণ্টা তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
পুলিশ জানায়, মান্নার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৩১ ধারায় মামলা করা হয়েছে। এসআই সোহেল রানা মামলাটির বাদী। মামলায় গতকাল সন্ধ্যায় মান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। থানায় হস্তান্তরের পর তাঁকে ডিবি কার‌্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বনানীর একটি বাসা থেকে মান্নাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একটি দল তাঁকে নিয়ে যায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। পরিবারের লোকজন গতকাল দিনভর খোঁজ করেও জানতে পারেননি, তিনি কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন।
দিনভর মান্নার খোঁজ পাওয়া না গেলেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে আভাস পাওয়া যায় যে তাঁকে রাতের যেকোনো সময় থানায় হস্তান্তর করা হবে। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে পুলিশের রমনা, মতিঝিল ও গুলশান বিভাগের ১১ থানায় মান্নার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, নাশকতা, লাশ ফেলাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে পুলিশ ২৪টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে মান্নাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বনানী থানায় একটি জিডি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে মান্নার কথোপকথন নিয়ে গত সোমবার আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মন্ত্রী ও সরকারি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা গতকাল পৃথক অনুষ্ঠানে মান্নাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলেন। আর বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি সংগঠন মান্নার খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এর আগে মান্নার স্বজনেরা জানান, ভাতিজির বনানীর বাসা থেকে সোমবার রাত সাড়ে তিনটায় নিয়ে যাওয়া হলেও গতকাল রাত পর্যন্ত তাঁরা মান্নার কোনো খবর জানেন না। মান্নাকে উদ্ধারে তাঁরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ঘটনায় বনানী থানায় জিডি করেছেন মান্নার ভাবি বেগম সুলতানা। বনানী থানায় করা সুলতানার জিডিতে বলা হয়, রাতে কলাবাগানের বাসা থেকে মান্না তাঁর ভাতিজি শাহানামা শারমিনের বনানীর বাসায় যান। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে সাদাপোশাকের পাঁচ-ছয়জন লোক ওই বাসার সামনে গিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। আগত ব্যক্তিরা বলেন, ‘আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’ পরে দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে একপর‌্যায়ে দরজা খুলে দেওয়া হয়। এরপর ভেতরে ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান তাঁরা।
বেগম সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, মান্নাকে নেওয়ার আধঘণ্টা পর ‘ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে’ বলে টিভিতে স্ক্রল দেখে তাঁরা আশ্বস্ত হন। কিন্তু সকাল নয়টার দিকে ‘ডিবির অস্বীকার’ স্ক্রল দেখে তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বলেন, একটা জ্যান্ত মানুষকে ডিবি পরিচয়ে এসে নিয়ে গেল। অথচ এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর জানা গেল না। মান্নার খোঁজে তাঁরা ডিবি কার‌্যালয় ও থানায় গেছেন। দুপুরে শুনতে পান, তিনি র‌্যাব সদর দপ্তরে আছেন। খোঁজ নিয়েছেন সেখানেও। কিন্তু সেখান থেকেও জানানো হয়, মান্না সেখানে নেই।
মেহের নিগার বলেন, র‌্যাব ও ডিবি সবাই মিথ্যা বলছে। নিশ্চয়ই মান্না কোনো না কোনো কার্যালয়ে আছেন। তাঁর স্বামীকে উদ্ধারে তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, মান্নাকে ধরে নেওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মান্নার সঙ্গে খোকা ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথোপকথনে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করা ও রাষ্ট্রদ্রোহের আভাস রয়েছে। এতে সেনাবাহিনীতে বিভেদ সৃষ্টিরও উসকানি ছিল।
নাগরিক ঐক্যের দাবি: গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে মান্নার মুক্তি দাবি করা হয়। এই সম্মেলনে মাহমুদুর রহমানের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল।
নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে দুটি টেলিফোন কথোপকথন ইন্টারনেটে প্রকাশিত হওয়ার পর নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, মান্নাকে ডিবি পুলিশ বনানীতে তাঁর আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ আটকের কথা অস্বীকার করছে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া: গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সাদাপোশাকধারী সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই মান্নাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে বক্তব্য দেওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। যে প্রক্রিয়ায় দেশের এই পর্যায়ের একজন নাগরিককে তুলে নেওয়া হলো, তাতে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং বেঁচে থাকার অধিকারের কোনো গ্যারান্টি অবশিষ্ট রইল না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ: প্রকাশিত ফোনালাপ ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বিনষ্টের অপতৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গতকাল পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, একই সঙ্গে নাশকতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফোন কথোপকথনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে লাশ ফেলে আন্দোলন গতিশীল করতে জোর দেওয়া হয়েছে। একজন রাজনীতিকের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য এত কম, তা ভেবে বিচলিত কমিশন। মান্না যেকোনো উপায়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা চলমান পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ ও জটিল করে তুলতে পারে।
গণফোরাম মান্নার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর সঠিক অবস্থান দ্রুততার সঙ্গে জনগণকে জানানোর দাবি জানিয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত সমাবেশে গতকাল খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, মান্নাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। এই সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, শুধু মান্না সাহেব নন, আরও অনেক সাহেব সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
শাহবাগ চত্বরে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী জাতীয় ঐক্য ফোরাম আয়োজিত সমাবেশে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র যাঁরা করছেন, তাঁদের একজন হলেন মান্না। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
এদিকে মান্নাকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন (হ্যাবিয়াস করপাস) করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মান্নার স্ত্রী ওই আবেদনটি করছেন। মেহের নিগার বলেন, প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় গতকাল রিট করা যায়নি।

No comments:

Post a Comment